বিকাশে এখন ৫০ হাজার টাকা লোন

Spread the love

আপনি কি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন যখন হঠাৎ করে টাকার প্রয়োজন হয়েছে কিন্তু ব্যাংকে যাওয়ার সময় বা সুযোগ ছিল না? আমিও পড়েছি আর সেই অনুভূতি সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু এখন চিন্তার কিছু নেই! বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘বিকাশ’ এখন আপনার জন্য নিয়ে এসেছে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়ার সুবিধা – যা আপনি পেতে পারেন মাত্র কয়েকটি ক্লিকে আপনার মোবাইল ফোন থেকেই।

বিকাশ অ্যাপে ৫০ হাজার টাকা লোন সুবিধা

বিকাশ অ্যাপে ৫০ হাজার টাকা লোন সুবিধা

বিকাশ লোন: একনজরে

বিকাশ এবং সিটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ২০২১ সালে চালু হওয়া এই ডিজিটাল লোন সেবা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের আর্থিক প্রযুক্তি সেবার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়া যেত, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এই সীমা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আমি নিজেও গত মাসে একটি ছোট লোন নিয়েছিলাম বিকাশ থেকে, আর সত্যি বলতে, এর সহজলভ্যতা আমাকে অবাক করেছিল। কোনো ব্যাংকে যাওয়া, লাইনে দাঁড়ানো, কাগজপত্র জমা দেওয়া – এসব ঝামেলা ছাড়াই মাত্র কয়েক মিনিটে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে লোনের টাকা জমা হয়ে গেল।

কারা পাবেন বিকাশ লোন?

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে – “এই ৫০ হাজার টাকার লোনটা কি সবাই পাবে?” উত্তর হলো: না, সবাই নয়। তবে যাঁরা নিয়মিত বিকাশ ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই সুযোগ একেবারে হাতের মুঠোয়।

বিকাশ ও সিটি ব্যাংক মিলে একটি স্মার্ট সিস্টেম বানিয়েছে, যা আপনার বিকাশ লেনদেনের ইতিহাস এবং আর্থিক আচরণ দেখে বুঝে ফেলে – আপনি লোন পাওয়ার মতো ক্রেডিট স্কোরে আছেন কিনা।

লোন পাওয়ার যোগ্যতা:

  • নিয়মিত বিকাশে টাকা পাঠানো, রিচার্জ করা, বিল দেওয়া
  • সময়মতো আগের লোন ফেরত দেওয়া (যদি নিয়ে থাকেন)
  • বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হওয়া
  • জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা
  • বিকাশ অ্যাকাউন্ট সচল থাকা

এই পুরো প্রক্রিয়াটি একদম অটোমেটিক – আপনাকে আলাদা করে কোথাও গিয়ে প্রমাণ দিতে হবে না। সিস্টেম নিজেই আপনার রেকর্ড দেখে সিদ্ধান্ত নেবে আপনি কত টাকা লোন পেতে পারেন।

বিকাশে কিভাবে পাবেন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন?

বন্ধুরা, এখন লোন নিতে আর ব্যাংকের সামনে ফর্ম হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। সব কিছু হবে আপনার মোবাইলেই – কয়েকটা ট্যাপ আর আপনার বিকাশ অ্যাপ থাকলেই কেল্লাফতে!

বিকাশ অ্যাপে লোন আবেদনের ধাপগুলো

বিকাশ অ্যাপে লোন আবেদনের ধাপগুলো

চলুন দেখে নেই একেবারে ধাপে ধাপে:

  1. বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন (আপডেটেড ভার্সন হলে ভালো হয়)
  2. হোম স্ক্রিনে “Loan” বা “ঋণ” নামে আইকনে ক্লিক করুন
  3. কাঙ্ক্ষিত টাকার পরিমাণ নির্বাচন করুন (৫০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত)
  4. শর্তাবলি পড়ে সম্মতি দিন
  5. বিকাশ পিন দিয়ে প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করুন

এরপর তাৎক্ষণিকভাবেই টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে7। এতে কোনো কাগজপত্র বা ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

আমার এক বন্ধু গত সপ্তাহে তার ছেলের স্কুলের ফি দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে টাকার প্রয়োজন পড়েছিল। ব্যাংকে যাওয়ার সময় ছিল না, আর আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততেও ইচ্ছে করছিল না। সে বিকাশ অ্যাপ খুলে দেখল লোন অপশন আছে। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ১৫,০০০ টাকা লোন নিয়ে স্কুল ফি পরিশোধ করে ফেলল। এই সহজ প্রক্রিয়া দেখে সে এখন বিকাশের একজন বড় ফ্যান!

বিকাশ লোনের সুবিধাসমূহ

বিকাশ লোন নেওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে পারম্পরিক ব্যাংক লোন থেকে আলাদা করে তোলে:

  1. তাৎক্ষণিক অনুমোদন: আবেদন করার সাথে সাথেই লোন পাবেন
  2. কাগজপত্রবিহীন প্রক্রিয়া: কোনো ডকুমেন্ট জমা দিতে হয় না
  3. জামানতবিহীন: কোনো ব্যাংক একাউন্ট বা জামানত লাগে না
  4. সহজ পরিশোধ: একাউন্ট ব্যালেন্স থেকেই অটো-কিস্তি পরিশোধের সুবিধা
  5. ন্যায্য প্রসেসিং ফি: লোনের উপর ব্যাংক প্রসেসিং ফি মাত্র ০.৫৭৫% (০.৫% + ভ্যাট)
  6. আগাম পরিশোধের সুবিধা: মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আংশিক বা সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন

বিকাশ লোন পরিশোধের নিয়মাবলি

লোন নেওয়া যতটা সহজ, পরিশোধ করাও ততটাই সহজ। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নিন:

  1. মেয়াদ: সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত লোনের মেয়াদ পাওয়া যায়
  2. কিস্তি পরিশোধ: নির্ধারিত তারিখে কিস্তির টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে
  3. আগাম পরিশোধ: গ্রাহক চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আংশিক বা সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন
  4. সুদের সুবিধা: আগাম পরিশোধ করলে শুধুমাত্র ব্যবহারকৃত সময়ের জন্যই ইন্টারেস্ট দিতে হবে
  5. অতিরিক্ত চার্জ নেই: অগ্রিম পরিশোধের জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হবে না

আমার এক আত্মীয় ৩০,০০০ টাকা লোন নিয়েছিলেন ৬ মাসের জন্য, কিন্তু ৪ মাসের মাথায় তিনি পুরো টাকা পরিশোধ করে দিলেন। ফলে তাকে বাকি ২ মাসের সুদ দিতে হয়নি, যা তার জন্য একটি বড় সাশ্রয় হয়েছিল।

বিকাশ লোনের সাফল্য

বিকাশ-সিটি ব্যাংকের এই ডিজিটাল লোন সেবা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে:

  • গ্রাহক সংখ্যা: প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক এই লোন সুবিধা নিয়েছেন
  • লোন সংখ্যা: ৫৫ লাখ বারের বেশি লোন দেওয়া হয়েছে
  • মোট অর্থমূল্য: প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা

এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশের মানুষ ক্রমশ ডিজিটাল আর্থিক সেবার দিকে ঝুঁকছে এবং বিকাশ লোন তাদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠেছে।

বিকাশ লোন না পেলে কী করবেন?

যদি আপনি এখনো বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্য না হন, তাহলে চিন্তা করবেন না। নিচের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি ভবিষ্যতে লোন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন:

  1. নিয়মিত বিকাশ ব্যবহার করুন: অ্যাড মানি, সেভিংস, পেমেন্টসহ বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করুন
  2. তথ্য হালনাগাদ করুন: বিকাশ অ্যাপে আপনার তথ্য হালনাগাদ করুন
  3. নমিনি যোগ করুন: আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে নমিনি যোগ করুন
  4. ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করুন: বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করুন
  5. লেনদেন বাড়ান: বিকাশ অ্যাপ থেকে বেশি বেশি লেনদেন করুন

বিকাশ লোন নেওয়ার সময় সতর্কতা

যেকোনো আর্থিক সেবা নেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিকাশ লোন নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখুন:

  1. শর্তাবলি পড়ুন: লোন নেওয়ার আগে সমস্ত শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ুন
  2. পরিশোধের সময়সীমা মেনে চলুন: নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ করুন
  3. বিলম্ব ফি সম্পর্কে জানুন: বিলম্বে পরিশোধ করলে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে
  4. প্রয়োজনীয় লোন নিন: শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণ লোন নিন, অপ্রয়োজনীয় ঋণগ্রস্ততা এড়িয়ে চলুন
  5. ব্যালেন্স রাখুন: কিস্তি পরিশোধের সময় অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন

বিকাশ লোন বনাম অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণ

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা রয়েছে। নিচের টেবিলে বিকাশ লোন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে:

বিষয়বিকাশ লোনপারম্পরিক ব্যাংক লোনএনজিও মাইক্রোক্রেডিট
সর্বোচ্চ পরিমাণ৫০,০০০ টাকা১ লক্ষ+ টাকা৫০,০০০-১ লক্ষ টাকা
আবেদন প্রক্রিয়াঅনলাইন, কয়েক মিনিটঅফলাইন, কয়েক দিনঅফলাইন, কয়েক দিন
কাগজপত্রপ্রয়োজন নেইঅনেক কাগজপত্রকিছু কাগজপত্র
জামানতপ্রয়োজন নেইপ্রয়োজনকিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন
অনুমোদন সময়তাৎক্ষণিককয়েক দিন/সপ্তাহকয়েক দিন
সুদের হারগ্রাহকভেদে ভিন্ন৯-১৫%১২-২০%
মেয়াদসর্বোচ্চ ৬ মাস১-৫ বছর৬ মাস-২ বছর

এই তুলনা থেকে দেখা যায় যে, বিকাশ লোন অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণের তুলনায় অনেক বেশি সহজলভ্য এবং দ্রুত।

বিকাশ লোন: সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

১. বিকাশ লোনের সুদের হার কত?

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী লোন অ্যামাউন্টের উপর বাৎসরিক ৯% ইন্টারেস্ট রেট প্রযোজ্য হবে।

২. একজন গ্রাহক কি একাধিক লোন নিতে পারেন?

হ্যাঁ, একজন গ্রাহক লোন অ্যামাউন্টের লিমিটের মধ্যে একাধিক লোন নিতে পারেন।

৩. লোন পরিশোধে বিলম্ব হলে কী হবে?

নির্দিষ্ট তারিখে গ্রাহকের বিকাশ একাউন্টে যথাযথ পরিমাণ অর্থ না থাকলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে, যার হার লোনের পরিমাণের উপর বাৎসরিক ১.৫%।

৪. বিকাশ লোন কি শুধুমাত্র বিকাশ অ্যাপ থেকেই নেওয়া যায়?

হ্যাঁ, এই লোন শুধুমাত্র বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেই নেওয়া যায়।

৫. লোন পাওয়ার পর কি টাকা ক্যাশ আউট করা যাবে?

হ্যাঁ, লোন পাওয়ার পর আপনি সেই টাকা সেন্ড মানি বা ক্যাশ আউট করতে পারবেন।

উপসংহার: আর্থিক স্বাধীনতার নতুন দিগন্ত

বিকাশ লোন বাংলাদেশের আর্থিক প্রযুক্তি খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি প্রমাণ করে যে, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা সহজলভ্য করা সম্ভব, যা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।

আমি নিজে বিকাশ লোন ব্যবহার করে দেখেছি এর সুবিধা। হঠাৎ করে টাকার প্রয়োজন পড়লে আর আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততে হয় না। মাত্র কয়েক ক্লিকে আপনি পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় অর্থ।

তবে মনে রাখবেন, যেকোনো ঋণই একটি আর্থিক দায়বদ্ধতা। তাই সর্বদা দায়িত্বশীলভাবে ঋণ নিন এবং সময়মতো পরিশোধ করুন। বিকাশ লোন আপনার আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, কিন্তু এটি বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করাই শ্রেয়।

আপনি কি বিকাশ লোন নিয়েছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top