বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে। বহুল প্রতীক্ষিত মহার্ঘ ভাতা চালুর বদলে সরকার এবার চালু করেছে “বিশেষ প্রণোদনা” নামে একটি নতুন আর্থিক সুবিধা। এই সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক স্বস্তি প্রদানে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষ প্রণোদনা কী?
বিশেষ প্রণোদনা হলো সরকার কর্তৃক বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত একটি অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা। এটি মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হারে দেওয়া হবে। এটি মূলত মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলা এবং সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য ও হার
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৩ জুন ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিশেষ প্রণোদনার হার নির্ধারিত হয়েছে কর্মচারীদের গ্রেড অনুসারে:
- গ্রেড ১–৯: মূল বেতনের ১০%
- গ্রেড ১০–২০: মূল বেতনের ১৫%
এই প্রণোদনা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এটি প্রতি মাসে নিয়মিত বেতনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
মহার্ঘ ভাতা নয় কেন?
বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারি চাকরিজীবীরা মহার্ঘ ভাতা চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে সরকার অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে এইবার “মহার্ঘ ভাতা” শব্দটি না ব্যবহার করে “বিশেষ প্রণোদনা” চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এটি মূলত একই কার্যকরী উদ্দেশ্য সাধন করবে, কিন্তু একে একটি বিকল্প নীতিগত কাঠামোর অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
কারা উপকৃত হবেন?
এই বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা পাবেন:
- বেতনভুক্ত সকল সরকারি কর্মচারী
- আধা-সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
- পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা
- পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) ও পেনশনাররা, যারা সরকারের বাজেটভুক্ত
বকেয়া প্রসঙ্গ
বিশেষ প্রণোদনা কার্যকর হবে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে। এর বিপরীতে পূর্ববর্তী মাসগুলোর কোনো বকেয়া প্রদান করা হবে না। অর্থাৎ, এটি ভবিষ্যত মাস থেকে প্রযোজ্য হবে।
সরকারি বাজেটে প্রভাব
বিশেষ প্রণোদনা বাস্তবায়নে সরকারের বার্ষিক অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয় চলতি ২০২৫-২৬ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সরকারকে বাজেট ব্যালান্সে রাখতে অন্যান্য খাতেও ব্যয় পুনর্বিন্যাস করতে হতে পারে।
বিশেষ প্রণোদনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া
- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বেতন বিল প্রস্তুতের সফটওয়্যার/অনলাইন পে-রোল সিস্টেম হালনাগাদ করবে
- অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র ও টেকনিক্যাল গাইডলাইন জারি করবে
- সকল দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত হার ও তারিখ অনুযায়ী বেতন বিল অনুমোদন করবে
বিশেষ শ্রেণির জন্য সুবিধা
নিয়মিত কর্মচারীদের পাশাপাশি, সরকারের ঘোষণায় নিম্নোক্ত শ্রেণির জন্যও বিশেষ বিবেচনা রয়েছে:
- চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী: নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে যাচাই সাপেক্ষে প্রণোদনা প্রযোজ্য
- প্রতিবন্ধী কর্মচারী: প্রচলিত হারে প্রণোদনার পাশাপাশি বিশেষ ভাতা অব্যাহত থাকবে
- দূরবর্তী/দুর্গম অঞ্চলের কর্মী: বিশেষ ভাতা বহাল থাকবে, যা প্রণোদনার সঙ্গে সমন্বিত হতে পারে
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতি ও শ্রম বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশেষ প্রণোদনা সরকারকে একটি ফ্লেক্সিবল কাঠামো দিচ্ছে যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে তাঁরা আরও স্বচ্ছতা ও সময়মতো পর্যালোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।
উপসংহার
সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালু সরকারের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। যদিও এটি প্রত্যাশিত “মহার্ঘ ভাতা” নয়, তবে বাস্তবিক অর্থে এটি একই অর্থনৈতিক স্বস্তি দেবে। এই সুবিধার ফলে সরকারের খরচ বাড়লেও, এটি কর্মচারীদের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি এবং কর্মদক্ষতা উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
📌 তথ্যসূত্র:
- প্রথম আলো
- ইনিউজ (ZoomBangla)
- ইত্তেফাক
I’m currently studying Journalism at Jahangirnagar University. Alongside my academic journey, I’ve also been involved in freelancing, which has helped me gain practical experience and broaden my skills. In my free time, I love reading books — it’s both a passion and a source of inspiration for me.